
অবিস্মরণীয় একাত্তর থেকে আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১। মহান মুক্তিযুদ্ধ বিজয় ও স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে এই ডিসেম্বরেই। তখন ছিলাম আমি মায়ের কোলে অত্যন্ত ছোট । এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমরা যারা বেঁচে আছি নিঃসন্দেহে তারা বড় ভাগ্যবান। কত বীর মুক্তিযোদ্ধা ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের উল্লাসে মুক্ত জন্মভূমিতে স্বাধীনতা অর্জনের আনন্দে উল্লসিত হয়েছেন, কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে সমৃদ্ধির আলোয় উদ্ভাসিত বাংলাদেশ তারা দেখলেন না, শামিল হতে পারলেন না এমন ঐতিহাসিক গৌরবময় আনন্দ উদযাপনে।তবে যতটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা ততটুকু আমরা কি এগিয়ে গিয়েছি? আমর মুখে শুধু বক্তৃতা বিবৃতিতে এগিয়ে গিয়েছি ,তাই নয় লুণ্ঠন আর বিচারহীনতায় এগিয়ে গিয়েছি। জনগনের সম্পদ লুণ্ঠন করে কানাডা সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে বেগম পাড়া তৈরী করছি।
আজ গনতন্ত্র হীনতায় বাংলাদেশ ধুকছে। মানুষের ভোটের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। দূর্ণীতির রাহুল গ্রাসে আজ বাংলাদেশের মানুষ হয়ে আছে দিশেহারা। হানাহানির রাজনীতিতে জর্জরিত রাজনিতী অঙ্গন , রাজনীতিতে শিষ্টাচার নাই বললেই চলে। বিরোধী দলকে কিভাবে কুনঠাসা করা যায় এটাই একমাত্র লক্ষ্য। ক্ষমতাসীন রাজনিতীবিদরা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। লাগামহীন কথাবার্তা আর ক্ষমতার দাপট এখন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
র – এর পদচারণায় দেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। আমাদের আভ্যন্তরিন ব্যাপারে ভারতের অদৃশ্য হস্তক্ষেপ যেন পরলক্ষিত হচ্ছে । মানবাধিকার লংঘনের দায়ে পুলিশ র্যাব আজ আমেরিকার কাঠগড়ায় প্রশ্নবিদ্ধ ? এ কেমন বাংলাদেশ দেখছি আমরা?
স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রণী ভূমিকায় যে নাম গুলো আসে তার মধ্যে মৌলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী , শহীদ জিয়া সহ নিম্নে বর্ণিত সেক্টর কমান্ডার্স তাদের কোন মূল্যায়ন হচ্ছে না, শুধু বঙ্গবন্ধু ছাড়া।ক্ষমতাসীনদের দাপটে মনে হচ্ছে দেশ যেন একাই বঙ্গবন্ধু পরিবারের।
নিম্নে সেক্টর কামাণ্ডারদের তালিকা —
১নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর জিয়াউর রহমান (এপ্রিল- জুন), ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম (জুন-ডিসেম্বর)
২নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর খালেদ মোশাররফ (এপ্রিল-অক্টোবর), ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার (অক্টোবর- ডিসেম্বর)
৪নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর সি. আর. দত্ত (মে-ডিসেম্বর)
৫নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর মীর শওকত আলী (আগস্ট- ডিসেম্বর)
৬নং সেক্টর কমান্ডার: উইং কমান্ডার এম. কে. বাশার (জুন-ডিসেম্বর)
৭নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর খন্দকার নাজমুল হক (এপ্রিল-আগস্ট), মেজর কিউ. এন. জামান (আগস্ট-ডিসেম্বর)
৮নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর এম. এ. ওসমান চৌধুরী (এপ্রিল-আগস্ট), মেজর এম. এ. মঞ্জুর (আগস্ট- ডিসেম্বর)
১০নং সেক্টরের কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না
১১নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর জিয়াউর রহমান(জুন-আগস্ট), মেজর এ. তাহের (আগস্ট-নভেম্বর), ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম. হামিদুল্লাহ (নভেম্বর-ডিসেম্বর)
সকলের নিকট আমরা চির কৃতজ্ঞ । যদি কেউ বলে যে স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ একক ভাবে ভূমিকা রেখেছেন তা হলে এটা হবে চরম মিথ্যাচার। সেক্টর কামাণ্ডারদের তালিকা দেখুন কয়জন আওয়ামী লীগ এর? আমি মনে করি সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বিজয় এসেছিল, তাতে এককভাবে কারো কৃতিত্বের কথা বলা যাবে না।

আজ বিজয়ের এই সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমার মেয়ে লিয়ানা বাংলাদেশে থেকে উদযাপনের সুযোগ পেল। বড় হয়ে ওর নিকট ছবিগুলো এটা ইতিহাস হবে। আগামীতে কি আমাদের এই ভবিষৎ প্রজন্মের নিকট বাংলাদেশ নামক দেশটি কি নিরাপদ স্থান হবে , নাকি তাদের জন্য অশান্তির স্থান হবে তার আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। আমরা যেন ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে পারি এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। তাহলেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট বাংলাদেশের গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে । আমরা কি পারবো অন্যায় নৈরাজ্যের হাত থেকে মুক্ত করে নতুন ধারার রাজনীতিক সরকার প্রতিষ্টা করে একটা স্বপ্নীল ক্ষুদামুক্ত , দূর্ণীতিমুক্ত , শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে শপথ হোক স্বাধীনতার এই সুবর্ণ জয়ন্তীতে।
সৈয়য়দ সোহেল ব্যাংকার ও সমাজকর্মী
লণ্ডন , আলতাফ আলী পার্ক শহীদ মিনার
১৬ই ডিসেম্বর ২০২১