প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে যুগপৎ আন্দোলন করছে সরকারবিরোধী দলগুলো। এই সময়ে রাজধানী থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত পালন করা হয়েছে কর্মসূচি। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে অনড় বিএনপি। সরকার পতন আন্দোলনে অংশ নিলেও রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারলে কীভাবে দেশ পরিচালনা হবে এনিয়ে মতনৈক্য ছিল সমমনা কয়েকটি দলের সঙ্গে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। এবার বিভ্রান্তি কাটাতেই যৌথ ঘোষণা নিয়ে আসছে বিরোধী দলগুলো। একসঙ্গে আন্দোলন ও কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হতে পারে শিগগিরই।
দিনক্ষণ ঠিক না হলেও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা দেয়া হবে। সরকার পতনের মধ্যদিয়ে একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতেই বিএনপি’র যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা আসছে। গতকাল দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব এই তথ্য জানান। এ সময় গণতন্ত্র মঞ্চের মুখপত্র ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম বলছেন, নির্বাচনের পরে কী ধরনের সরকার ব্যবস্থা হবে, কী ধরনের শাসন ব্যবস্থায় আমরা দেশ পরিচালনা করবো, তা নিয়ে যৌথ ঘোষণা দেয়ার বিষয়ে আমরা বিএনপি’র সঙ্গে কথা বলেছি।
একমত হয়েছি। আমরা আশা করি শিগগিরই ঘোষণা দিতে পারবো। সারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে এই যৌথ ঘোষণা আসবে।
লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চলমান আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক উন্নয়ন আরও দৃঢ় করা যায় এবং আন্দোলন সংগ্রামকে সামনে এগিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আশাকরি যুগপৎ কর্মসূচির আন্দোলন আরও বেগবান হবে। অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা আরও বাড়াতে পারবো এবং আন্দোলনকে আরও বেগবান করে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকারকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। ফখরুল বলেন, বৈঠকে আমরা একমত হয়েছি যে, এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবো না। এমনকি দেশে একতরফা কোনো নির্বাচন হতে দেবো না।
তিনি বলেন, এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জনমতকে দমন করার জন্য গত ১৪ বছর ধরে একই কায়দায় সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করে তারা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে। গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। তিনি জানান, কৌশলগত ও বাস্তবতার আলোকে বিএনপি’র অনেক কর্মসূচিতে গণতন্ত্র মঞ্চ অংশ নেয় না। কিন্তু এতে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে কোনো মতানৈক্য নেই। মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে প্রথম আলো’র সম্পাদক মতিউর রহমান ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের নিন্দা করা হয়েছে। এ আইন ব্যবহার করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার দাবিতে সবাই একমত।
গত বছরের ডিসেম্বরে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। একইসঙ্গে একই দাবিতে বিএনপি’র সঙ্গে আন্দোলন করে আসছে সমমনা দলগুলো। সূত্র জানায়, রমজান মাসের কারণে আন্দোলনের গতি কিছুটা থমকে গেছে। ঈদ শেষে আরও বেশি শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি ও সমমনারা। গত ৩ মাসের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্যমে মাঠে নামবে বিএনপি। এজন্য আন্দোলনের রূপরেখাও প্রস্তুত করছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। সমমনা দল ও জোটগুলোর দাবি-দাওয়া নিয়ে বিএনপি একটি খসড়া তালিকা করেছে। চলমান আন্দোলন গতিশীল করতে শিগগিরই যৌথভাবে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিবে দলটি। বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতার দাবি, সরকারকে আর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। এতদিনের আন্দোলন ছিল তাদের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি। যৌথ যুগপৎ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে চূড়ান্ত ভাবে মাঠে নামবে সরকারবিরোধী দলগুলো। এজন্য বিরোধী শিবিরগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকেও সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা দেবে।
গতকাল লিয়োজোঁ কমিটির বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। অপরদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান।